তথ্য ও প্রযুক্তির মশাল জ্বলে উঠুক হাতে হাতে

জেনে নিন নারীদের অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারন ও প্রতিকার







আমাদের দেশের নারীদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব একটি প্রচলিত সমস্যা। এমন কোন নারী নেই যে এই সমস্যার সম্মুখীন হয়নি। কিন্তু কেন এই সমস্যা হয় তা কি আপনারা জানেন? যারা জানেন না তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট।

সাধারণত একজন নারীর জীবনে ২৫ দিন থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে যেটি হয় সেটি নিয়মিত ঋতুস্রাব। আর যদি ২৫ দিনের আগে বা ৩৫ দিনের পরে হয় তবে সেটিকে আমরা অনিয়মিত ঋতুস্রাব বলে থাকি । অনিয়মিত ঋতুস্রাব সাধারণত যৌবনের প্রারম্ভে এবং যৌবন শেষে হতে পারে। যৌবনের প্রারম্ভে সাধারণত ১২ থেকে ২০ বছর বয়সে কোন মেয়ের শরীরের ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন যদি অপরিপক্ব বা প্রিমেচিউর থাকে তবে অনিয়মিত ঋতুস্রাব হয়। আবার নারী শরীরে মেনোপজ শুরু হওয়ার আগে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে ।
এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতার কারণেও এই সমস্যা হতে পারে। নিম্নে এ বিষয়ে তুলে ধরা হল-

অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারণ:

* মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের তারতম্যের কারণে এই সমস্যা হয়।

* অনেক সময় বিবাহিত নারীরা হঠাৎ করে জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিলে স্রাব অনিয়মিত হতে পারে।

* বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপের ফলে মহিলাদের স্রাব দেরিতে হতে পারে।

* নারীদের শরীরের রক্ত কমে গেলে অর্থাৎ এনিমিয়া হলে অনিয়মিত মাসিক হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

* অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, শরীরের ওজন বেড়ে গেলে এই সমস্যা হয়।

* অনেক সময় জরায়ুর বিভিন্ন জটিলতার কারণে স্রাব অনিয়মিত হতে পারে।

* সহবাসের সময় পুরুষের শরীর থেকে আসা রোগের কারণে হতে পারে। যেমন :গনোরিয়া, সিফিলিস ইত্যাদি।

* শরীরে টিউমার বা ক্যানসার ইত্যাদি অসুখের কারনে হতে পারে।

* নারীদের বয়স ৪৫ পার হলে প্রি মেনোপজের সময় স্রাব অনিয়মিত হয়ে থাকে।

* যেসব নারী শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান সেসব নারীর অনিয়মিত ঋতুস্রাব হতে পারে ।

এছাড়াও কিছু কিছু নারীর ক্ষেত্রে প্রতিমাসে নিয়মিত ঋতুস্রাব হয় না। এক মাসে রক্তপাত হলে হয়তো আরেক মাসে হয় না। অনেকের ক্ষেত্রে দুই-তিন মাস পরপর হয়ে থাকে। আবার হলে ঋতুস্রাব বেশি সময় ধরে হয়। কখনো অল্প রক্তপাত হয় আবার কখনোও বেশি হয়।

এর ক্ষতিকর প্রভাব:
যদিও এই সমস্যা খুব মারাত্মক না তথাপি কিছু কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক সমস্যা সৃস্টি করতে পারে। যেমন:

* সন্তান ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
* অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ হতে পারে।
* এ ছাড়া মেজাজ খিটখিটে থাকা এবং অস্বস্তিবোধ তৈরি হয়।

চিকিৎসা :
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাধারণত হরমোনাল থেরাপি দেওয়া হয়। কারো ক্ষেত্রে যদি বেশি ওজনের জন্য এই সমস্যা হয় তবে ডায়েট ও ব্যয়াম করতে বলা হয়। তবে সন্তান ধারণক্ষম বয়সে সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। বেশি রক্তপাত হলে আয়রন ক্যাপসুল দেওয়া হয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচিত।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

১) যদি বছরে তিন বারের বেশি ঋতুস্রাব না হয়।
২) যদি ঋতুস্রাব ২৫ দিনের আগে এবং ৩৫ দিনের পরে হয়।
৩) ঋতুস্রাবের সময় অনেক বেশি রক্তপাত হয়।
৪) সাত দিনের বেশি সময় ধরে ঋতুস্রাব চলতে থাকে।
৫) ঋতুস্রাবের সময় খুব ব্যথা হলে।

জীবনযাত্রার পরিবর্তন:
* শরীরের ওজন সবসময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
* মানসিক চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
* পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
* আয়রন জাতীয় খাবার খেতে হবে যাতে শরীরে পরিমিত পরিমাণে রক্ত থাকে।