তথ্য ও প্রযুক্তির মশাল জ্বলে উঠুক হাতে হাতে

জেনে নিন খাঁটি মধু চেনার উপায়






মধু হল এক প্রকারের মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থ, যা মৌমাছি ও অন্যান্য পতঙ্গ ফুলের নির্যাস হতে তৈরি করে এবং মৌচাকে সংরক্ষণ করে। মধুতে উচ্চ ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ তরল বিদ্যমান এবং এটি সুপেয়। বিভিন্ন খাদ্য প্রস্তুতিতে মধুর ব্যবহারে চিনির চেয়ে অনেক সুবিধা রয়েছে। মধুর বিশিষ্ট গন্ধের জন্য অনেকে চিনির চাইতে মধুকেই পছন্দ করে থাকেন।
আমরা জানি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মধু কতটা দরকারী। মধুর উপকারিতা এবং কার্যকারীতা বলে শেষ করার মতো নয়। তবে মধু যদি আসল না হয়ে ভেজাল যুক্ত হয়, কিংবা নকল মধু হয়, তখন কিন্তু হিতে বিপরিত হতে পারে। আজকে আমি আপনাদের সামনে খাটি মধু চিনার কিছু টিপস নিয়ে হাজির হচ্ছি।


মধুর পানি পদ্ধতি: এ পদ্ধতিতে আপনাকে এক গ্লাস পানির মধ্যে মাত্র এক চামচ মধু মিশাতে হবে। এক গ্লাস পানির মধ্যে মধু মিশিয়ে আস্তে আস্তে নাড়ুন। যদি দেখেন মধুর সাথে পানি মিশে যাচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে এই মধুটি আসল মধু না। আর যদি মধু আসল হয়ে থাকে, তাহলে কিন্তু পানিতে মিশে যাবে না, বরং ছোট ছোট দলা আকারে পানির মধ্যে ছড়িয়ে যাবে। তবে এই পদ্ধতিতে আসল মধুর সাথে কিছুটা ভেজাল মেশালে তা সহজে বোঝা যাবে না।

পিপড়া পদ্ধতি : পিপড়া মিষ্টি জিনিস পছন্দ করলেও মধু পছন্দ করে না। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে, তবে আমি সেদিক যাচ্ছি না। এক টুকরা কাগজে কিছু মধু লাগিয়ে যেখানে পিঁপড়া আছে সেখানে রেখে দিন। যদি পিঁপড়া এই কাগজের দিকে আকৃষ্ট হয়, এবং এটিকে ঘিরে ধরে, তাহলে বুঝতে হবে এই মধু আসল না। আর যদি পিঁপড়া পাত্তা না দেয়, তাহলে বুঝবেন যে এটা আসল মধু।

কাপড়ে দাগ পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে পরীক্ষার জন্য প্রথমেই এমন এক টুকরা সাদা কাপড় নিন যেটি আপনি হয়ত আর পরে ব্যবহার করবেন না। এবার কাপড়ে সামান্য মধু সরাসরি লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। যদি পানিতে ধুয়ে ফেললে দাগ চলে যায়, তাহলে বুঝবেন এটি আসল। নকল মধু বা ভেজাল মেশানো মধুতে থাকা জিনিষ আপনার কাপড়ে দাগ ফেলবে, যা আসল মধুতে হয় না।

ডিপ ফ্রিজ পদ্ধতি : মধু একটি বোতল বা বাটিতে নিয়ে ডিপ ফ্রিজে একদিন রেখে দিন। একদিন পর মধু বের করে দেখুন, যদি আসল মধু হয়, তাহলে এটির সামান্যতম অংশও জমবে না। যদি পুরোটা জমে যায় কিংবা কিছু অংশ জমে কিংবা নিজের অংশ জমে আসছে এমন হয়, তাহলে বুঝবেন যে এটিতে ভেজাল আছে। আসল মধু ঠাণ্ডায় জমে যায় না।

অগ্নি পরীক্ষা : এ পরীক্ষার জন্য আপনাকে এক টুকরা কটন উয়িক নিতে হবে। এর এক প্রান্তে একটু মধু লাগিয়ে নিন। এবার এখানে আগুন ধরিয়ে দিন। এখান থেকে তিনটি ফলাফল আসতে পারে। যেমন :

১. আগুন জ্বলবে না : এতে করে বুঝবেন যে মধুটি পুরাটাই নকল এবং এতে প্রচুর পরিমাণে পানি আছে। ফলে আগুন জ্বলছে না।
২. আগুন জ্বলবে, কিন্তু পটপট শব্দ হবে : এতে বুঝবেন যে মধুটি আসলই, শুধু ভিতরে পানি মেশানো আছে আরকি। শব্দ যত বেশী, পানি তত বেশী।
৩. আগুন জ্বলবে, শব্দ হবে না : আমার মনে হয় আর বলে দিতে হবে না যে এমনটা হলে আপনি বুঝবেন যে এই মধু আসল মধু, এবং ভেজাল মুক্ত মধু।

স্পিরিট পদ্ধতি : এর জন্য প্রথমেই আপনাকে যে কোনো সাইন্স ইকুইপমেন্ট স্টোর থেকে মেথিলেটেড স্পিরিট কিনে আনতে হবে। পরীক্ষাটি সতর্কভাবে করবেন এবং হাত দিয়ে সরাসরি ধরবেন না। সমান পরিমাণে মেথিলেটেড স্পিরিট এবং মধু নিতে হবে এবং নাড়তে থাকতে হবে। যদি দেখেন মধু তলানী হিসাবে জমা হচ্ছে, তাহলে বুঝবেন মধু আসল। আর যদি স্পিরিটের রং সাদাটে হয়ে আসে, তাহলে বুঝবেন মধুটি নকল।

ব্লটিং পেপার পদ্ধতি : এই পরীক্ষার জন্যও আপনাকে কোনো সায়েন্স স্টোর থেকে ব্লটিং পেপার কিনে আনতে হবে। ব্লটিং পেপারের উপরে কয়েক ফোঁটা মধু নিন। যদি মধু ব্লটিং পেপারের ভিতরে আস্তে আস্তে ঢুকে যায় বা মিশে যায়, বুঝবেন এটি আসল মধু নয়। কারণ আসল মধু ব্লটিং পেপারকে ভেজায় না।


ধন্যবাদ সবাইকে। ভালো থাকবেন।