তথ্য ও প্রযুক্তির মশাল জ্বলে উঠুক হাতে হাতে

ইনসোমনিয়া কি? জেনে নিন এর কারন ও প্রতিকার




ইনসোমনিয়া মূলত কোন রোগ নয় বরং একটি অবস্থা। ঘুমাতে পারার অক্ষমতা বা একটা নির্দিষ্ট সময় ঘুমিয়ে থাকতে না পারার অবস্থাকেই ইনসোমনিয়া বলে। যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে এই সমস্যাটা দিন দিন যেন আরও প্রকট হয়ে উঠছে। বিভিন্ন কারণে এটা হতে পারে। যেমন-স্ট্রেস,দুশ্চিন্তা,বিষণ্ণতা,খাদ্যাভাস ইত্যাদি।

জীবনের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি সময় আমরা ঘুমাই। বয়স অনুযায়ী অবশ্য ঘুমের একটা স্বাভাবিক ছন্দ আছে। যেমন: শিশুরা খুব বেশি ঘুমায়। আর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ঘুমের এই সময়সীমা কমে যায়। ফলে বৃদ্ধরা স্বাভাবিক ভাবেই অনেক কম ঘুমান। আসলে শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজনের ওপরই নির্ভর করে ঘুমের এই মাপ। তবে খুম কম ঘুম বা খুব বেশি ঘুম কোনোটাই স্বাভাবিক নয়। চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে ৪ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুম স্বাভাবিক। আর মোটামুটি ৬ থেকে ৭ ঘন্টার ঘুম হচ্ছে আদর্শ ঘুম।


বৈজ্ঞানিকদের মতে ঘুমের মধ্যে দুই ধরনের দশা থাকে। একটিকে বলা হয় ‘REM বা র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট দশা’ এবং অন্যটিকে বলা হয় ‘NREM বা নন র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট দশা’। আমরা যখন ঘুমাই তখন এক ঘুমের মধ্যেই এই দুটি দশা ঘুরে ফিরে চলতে থাকে। আরইএম দশায় শরীরে গরম বেশি লাগে, পালস রেট ও রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং এই দশাতেই মানুষ স্বপ্ন দেখে। এটাকে বলা হয় পাতলা ঘুমের স্তর। আর এনআরইএম দশায় মানুষ গভীরভাবে ঘুমায়।

ইনসোমনিয়াকে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. ইনিশিয়াল বা প্রাথমিক ইনসোমনিয়া : যাদের ঘুম আসতে দেরি বা অসুবিধা হয়।
২. মিডল ইনসোমনিয়া : যাদের ঘুম বার বার ভেঙে যায় এবং
৩. টারমিনাল ইনসোমনিয়া : যাদের ঘুম তাড়াতাড়ি ভেঙে যায়।

আর যাদের সব অসুবিধাই আছে, তাদের ক্ষেত্রে বলে গ্লোবাল ইনসোমনিয়া। 

চিকিৎসা : ইনসোমনিয়া যে কারণে হয়েছে তার চিকিৎসাই প্রথমে করা হয়। তাছাড়া ইনসোমনিয়ার জন্য আলাদা করে কিছু বিশেষ ঔষধ দেয়া হয়। কোনো কোনো রোগী অবশ্য শুধু ইনসোমনিয়ার চিকিৎসাই করাতে চান, কিন্তু সেক্ষেত্রেও রোগীর কেস হিস্ট্রি নিয়ে বিচার-বিবেচনা করতে হয়। ইনসোমনিয়ার রোগীর চেহারায় একটা অবসাদ, ক্লান্তিভাব আসে। অনেক সময় রোগী নিজেই ঘুমের ওষুধ নিয়ে থাকেন। তার ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে।

নিচের নিয়মগুলো মেনে চললে উপকার পেতে পারেন। 
* বিছানা শুধু ঘুমের জন্যই নির্দিষ্ট করে রাখুন। বিছানায় বসে টিভি দেখা, আড্ডা দেয়া, খাবার খাওয়া বন্ধ করুন। 
* খালি পেটে কখনো শুতে যাবেন না। তবে রাতে গুরুভোজ করবেন না। বেশি ভরা পেটে শুতে যাওয়া ঠিক নয়। আবার খেতেই সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়াটাও অনুচিত। খাওয়া ও শোয়ার মধ্যে সময়ের তফাত রাখুন। 
* শোয়ার আগে এক গ্লাস দুধ খেতে পারেন। দুধে থাকে ট্রিপটোফ্যান যা আপনাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে। 
* নিয়মিত গোসল এবং শুতে যাওয়ার আগে আরামবোধ করলে ঘাড়, মুখ ও পা পানি দিয়ে মুছে নিতে পারেন। 
* ঘুমাতে যাওয়ার সময় সারাদিনের ক্লান্তি, বিপর্যয় বা উত্তেজনার কারণগুলো নিয়ে চিন্তা করবেন না। 
* খুব বেশি উত্তেজিত হয়ে বিছানায় যাবেন না। 
* ঘুমের আগে কোনো ভারী কাজ বা অত্যাধিক মাথার কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। 
* প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা করুন। 
* দুপুরের ঘুম আপনার শুধু কর্মক্ষমতাই কমায় না, আপনার রাতের ঘুমও নষ্ট করে। অতএব, এটি বাদ দিন। 
* ঘুমাতে যাওয়ার আগে সিগারেট, তামাক, চা, কফি না খাওয়াই ভাল। 
* দুই-এক দিনের ঘুম না হওয়াতেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন না। তবে নিয়মিত না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।