তথ্য ও প্রযুক্তির মশাল জ্বলে উঠুক হাতে হাতে

ল্যাপারোস্কপি সার্জারি কি, এর সুবিধা এবং অসুবিধা







আমরা সচরাচর পেট কেটে সার্জারী করে থাকি। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে সাথে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক উন্নতি হয়েছে ৷ যার ফলে আবিস্কার হয়েছে পেট না কেটে কি করে শুধুমাত্র কয়েকটি ফুটো করে অপারেশন করা যায় ? এই ফুটো দিয়ে ছোট ক্যামেরা ও অন্যান্য যন্ত্র প্রবেশ করিয়ে পেটের ভেতরটা মনিটরের পর্দায় দেখে সার্জারী করাকেই ল্যাপারোস্কপিক সার্জারী বলা হয়।


ইতিহাসঃ ল্যাপারোস্কপিক পদ্ধতিতে পিত্তথলির অপারেশন প্রথম শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। বাংলাদেশে এর প্রচলন ১৯৯১ সনে খুব স্বল্প পরিসরে। তবে ২০০০ সাল থেকে এর প্রচলন অতি দ্রুত প্রসার লাভ করছে।


কি ভাবে ল্যাপারোস্কপি করা হয়?
প্রথমে পেটের উপরি ভাগে ১টি ১০ মিমি. ফুটো করে ল্যাপারোস্কপি বা অতি আধুনিক ক্যামেরা ও লাইট পেটে প্রবেশ করানো হয়। এরপর পেটের মধ্যে কার্বনডাই অক্সাইড গ্যাস দিয়ে পেট ফুলানো হয়। এর পর অন্য একটি, দুটি বা তিনটি ৫/১০ মিমি. ফুটো করে প্রয়োজনীয় অপারেশন করা হয়।

ল্যাপারোস্কপি


কি কি অপারেশন সম্ভব ?
ল্যাপারোস্কপিক সার্জারী প্রথম শুরু হয় পিত্তথলি অপারেশনের মাধ্যমে। বর্তমানে এপেনডিসেক্টমী, হার্নিয়া, ডিম্বাশয় কিংবা জরায়ুর অপারেশন, মলদ্বারের ক্যান্সার, লিভার সার্জারী, এবং অন্যান্য সার্জারী যেমন-কিডনির অপারেশন সব কিছুই এর মাধ্যমে করা যায়।

ল্যাপারোস্কপিক সার্জারীর সুবিধা সমূহঃ
* ল্যাপারোস্কপিক মেশিনের সাহায্যে কাটা ছাড়া সূক্ষভাবে পিত্তথলি অপারেশন করা হয়। কেননা ল্যাপারোস্কপিক পদ্ধতিতে ক্যামেরার সাহায্যে ছোট জিনিস বড় করে দেখে সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতির সাহায্যে অপারেশন করা হয়।
* ল্যাপারোস্কপিক পদ্ধতিতে রক্তপাত কম হয় এবং অপারেশন পরবর্তী ব্যাথা কম হয়।
* রোগী দুই-এক দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়িতে যেতে পারে।
* ক্ষুদ্র ছিদ্রের মাধ্যমে অপারেশন করা হয় বিধায় পরবর্তীতে দাগ থাকে না বললেই চলে।
* আপাত দৃষ্টিতে ব্যয়বহুল মনে হলেও সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যয়, হাসপাতালে অবস্থান, যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ বিবেচনায় আনলে ল্যাপারোস্কপিক সার্জারী সাশ্রয়ী অপারেশন পদ্ধতি।

ল্যাপারোস্কপির সীমাদ্ধতাঃ
যেহেতু ল্যাপারোস্কপিক সার্জারীর জন্য কিছু উন্নত যন্ত্রপাতির দরকার তাই এর খরচ কিছুটা হলেও বেশী হয়ে থাকে। রোগীর অবস্থাভেদে সব সময় ল্যাপারোস্কপিক সার্জারী করা সহজ নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রথাগত ওপেন সার্জারী করতে হয়। দেখা গেছে শতকরা ৫ ভাগ ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কপিক সার্জারীকে ওপেন সার্জারীতে রূপান্তর করতে হয়।

কুসংস্কারঃ
অনেক রোগী মনে করেন যে ল্যাপারোস্কপিক সার্জারীর মাধ্যমে বোধ হয় পুরোপুরি অপারেশন সম্ভব নয়। আবার অনেকে মনে করেন যে ল্যাপারোস্কপিক সার্জারীতে হয়ত কিছু অংশ থেকে যায়। আবার অনেকে বলেন যে, এত ছোট ফুটো করে কি ভাবে শরীরের বড় বড় অঙ্গের অপারেশন করা যায় ? প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞানের উন্নতির ফলেই আজ এ অসম্ভব সম্ভব হয়েছে।

শেষ কথাঃ
একজন রোগীর কথা ভেবেই আমরা ল্যাপরোস্কপিক সার্জারীর কথা বলে থাকি। ল্যাপারোস্কপিক সার্জারীতে রোগী যত সহজে সার্জারীর কষ্টগুলো থেকে মুক্ত হয় ওপেন সার্জারীতে তা কখনই সম্ভব নয়। তাই বর্তমান সময়ে ল্যাপারোস্কপিক সার্জারী প্রতি নিয়তই বাড়ছে।