দীর্ঘমেয়াদী আমাশয়ের সমস্যার মধ্যে একটি হলো ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম তথা আইবিএস। পৃথিবীর মানুষ পরিপাকতন্ত্রের যে সমস্যাটিতে সবচেয়ে বেশী ভুগে থাকেন এবং যে সমস্যাটির জন্য জীবন যাপনের মানে ঘাটতি হয় তা হলো আইবিএস৷ পুরুষদের চেয়ে মহিলারাই প্রায় দুই থেকে তিনগুণ এই সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়। যারা আইবিএস নামক দীর্ঘমেয়াদী আমাশয় সমস্যায় ভুগেন তাদের কারো কারো উক্ত রোগের সাথে বদহজম, দীর্ঘমেয়াদী ক্লান্তি, মাসিকের সময় ব্যথা এবং পুরো শরীর ব্যথাসহ এই জাতীয় সমস্যা থাকে ৷
আইবিএসের কারণঃ
আইবিএসের কারণ ও প্রভাবক হিসেবে বিজ্ঞানীরা অনেকগুলো বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন। এগুলো দুটো ভাগে ভাগ করা যায় ৷ যেমন - মনোসামাজিক ও শারীরবৃত্তীয়।
মনোসামাজিক কারণের মধ্যে আছে দুশ্চিন্তা ও হতাশা। এছাড়া হঠাৎ অধিক মানসিক চাপও আইবিএসকে প্রভাবিত করে। দেখা গেছে, আইবিএসে আক্রান্ত রোগীরা অল্প সমস্যা হলেই মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তারা পরিস্থিতি সহজে মানিয়ে নিতে পারেন না।
শারীরবৃত্তীয় সমস্যার মধ্যে রয়েছে অন্ত্রনালীর অস্বাভাবিক নাড়াচাড়া, অন্ত্রনালীর বেশী স্পর্শকাতর হয়ে পড়া, এলার্জী ও ইনফেকশন।
আইবিএস রোগের লক্ষণঃ
আইবিএস আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কারো কারো দুধ ও গম জাতীয় খাবার সহ্য করার ক্ষমতা কম অর্থাৎ এ ধরনের খাবার খাওয়া মাত্রই তাদের আমাশয়ের সমস্যা শুরু হয়ে যায়। সকল আইবিএস রোগীদের মধ্যেই এই দুই ধরনের সমস্যা দেখা যায় ৷ যথাঃ পাতলা পায়খানা ও কোষ্ঠকাঠিন্য। কারো কারো ক্ষেত্রে আবার দুটোর মিশ্রণ হয়। আবার অধিকাংশ রোগীরই দেখা যায়, কিছু দিন কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে আবার কিছু দিন পাতলা পায়খানা তথা আমাশয় হচ্ছে। তবে কোনটা বেশী হয় তার উপর ভিত্তি করে আইবিএসকে দুটো ভাগে ভাগ করা হয়- কোষ্ঠকাঠিন্য প্রধান এবং আমাশয় প্রধান। তবে যে সমস্যাটি প্রায় সবার থাকে তা হলো পুনঃপুনঃ পেটে ব্যথা। সাধারণত তলপেটে কামড় দিয়ে ব্যথা হয় এবং পায়খানা হয়ে ব্যথা ভালো হয়ে যায়। অনেকের পেটে বুট বুট আওয়াজ হতে থাকে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য প্রধান, তাদের পেটে ব্যথার সাথে ছোট ছোট খণ্ডে পায়খানা হয়। আর যাদের আমাশয় প্রধান তাদের ঘন ঘন কিন্তু অল্প পায়খানা হয়। মজার ব্যাপার হলো, ঘন ঘন পায়খানা হলেও ওজন ঠিক থাকে এবং মলের সাথে শুধু আম বা মিউকাস যায়, রক্ত যায় না।
আইবিএসের লক্ষণগুলোকে এভাবে সাজানো যায়ঃ
১. মলত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তন
২. পেটে কামড় দিয়ে ব্যথা
৩. পেট ফুলে যাওয়া
৪. মলের সাথে আম যাওয়া এবং
৫. মলত্যাগ করার পর ঠিক ভাবে ত্যাগ হয়নি মনে হওয়া।
এই সমস্যাগুলো ৬ মাসের বেশী থাকলে এবং মানসিক চাপের সময় এ ধরনের সমস্যা বেশী হলে আইবিএস হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়। এছাড়াও যাদের এই সমস্যা আছে তারা পোলাও, কোর্মা, বিরিয়ানী, তেহারী ইত্যাদি তেলযুক্ত খাবার এবং দই, দুধ-চা, পায়েস, সেমাই ইত্যাদি দুধ নির্মিত খাবার খেলে সাথে সাথেই দেখা যায় তাদের পেট খারাপ হয়ে পড়ে।বাংলাদেশ লিভার সেন্টারের গবেষণা থেকে জানা গেছে- যে সকল রোগীদের দীর্ঘমেয়াদী লিভার প্রদাহ থাকে এবং ফ্যাটি লিভার থাকে তাদের অধিকাংশই কোন না কোন সময় আইবিএস-এ আক্রান্ত হন ৷
আইবিএস-এর চিকিৎসাঃ
* যাদের আমাশয় প্রধান আইবিএস তাদেরকে লোপেরামাইড এবং অ্যামিট্রিপটাইলিন ইত্যাদি ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
* যাদের পেটে ব্যথা ও বুট বুট আওয়াজের সমস্যা থাকে তাদেরকে মেবেভেরিন, অ্যালভেরিন ইত্যাদি মেডিসিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
* যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য প্রধান আইবিএস তাদেরকে ফাইবারযুক্ত খাবার (যেমন: শাকসবজি), ইসবগুলের ভুসি, ল্যাকটুলোজ ইত্যাদি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
যে সকল রোগী উপরোক্ত উপায়ে ভালো হয় না তারা অন্যান্য উপায়ে চিকিৎসা নিতে পারেন। এগুলোকে মেডিকেলের ভাষায় বলা হয় অল্টারনেটিভ ট্রিটমেন্ট এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: রিলাক্সেশন থেরাপী, হিপনোথেরাপী, বায়োফিডব্যাক ইত্যাদি।