তথ্য ও প্রযুক্তির মশাল জ্বলে উঠুক হাতে হাতে

স্ট্রোক কী, স্ট্রোক হলে তাৎক্ষণিক করণীয় কী কী ?


স্ট্রোক হলে করণীয় কী কী


স্ট্রোক হল মস্তিষ্কের রক্তনালীর একটি রোগ। মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিড়ে গিয়ে অথবা ব্লক হওয়ার  কারণে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহের ঘাটতি দেখা দিয়ে আক্রান্ত অংশের কোষ নষ্ট হওয়াকে স্ট্রোক বা ব্রেন স্ট্রোক বলে৷ 

স্ট্রোক হলে মস্তিষ্কের কোষগুলোর বেঁচে থাকার অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ মস্তিষ্কের স্বাভাবিক রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই রক্ত সরবরাহ দুই থেকে পাঁচ মিনিটের বেশি বন্ধ থাকলেই স্নায়ুকোষ স্থায়ীভাবে ধ্বংস হয়।

 

স্ট্রোকের লক্ষণ বা উপসর্গঃ

১) শরীরের কোনো একদিকে দুর্বলতাবোধ করা বা নাড়াতে না পারা

২) হাত-পা অবশ অবশ ভাব হওয়া 

৩) মুখ একদিকে বেঁকে যাওয়া

৪) প্রচণ্ড মাথাব্যথা হওয়া 

৫) কথা অস্পষ্ট হওয়া, জড়িয়ে যাওয়া বা বলতে না পারা

৬) বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব হওয়া 

৭) দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া

৮) মুখের অসাড়তা, কথা জড়িয়ে যাওয়া

৯) বেসামাল হাঁটাচলা বা ভারসাম্য না থাকা

১০) হঠাৎ খিঁচুনি বা ধপ করে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হওয়া ইত্যাদি।


স্ট্রোক হলে তাৎক্ষণিক করণীয়ঃ উপরোক্ত উপসর্গগুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে স্ট্রোক হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এমন হলে যা করতে হবে তা হলো :

১) রোগীকে একদিকে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে। এ অবস্থায় কোনো খাবার বা ওষুধ মুখে দেওয়া যাবে না। কারণ এগুলো শ্বাসনালিতে ঢুকে আরো ক্ষতি করতে পারে।

২) মুখে জমে থাকা লালা, বমি পরিষ্কার করে দিতে হবে।

৩) গায়ে থাকা জামা-কাপড় ঢিলা করে দিতে হবে বা সম্ভব হলে খুলে দিতে হবে

৪) রোগীকে অতি দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিতে হবে৷ মনে রাখবেন, রোগীকে যত দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হবে তত ক্ষতি কম হবে৷ যত দেরি হবে ততই ব্রেনের কোষ ধ্বংস হয়ে যাবে৷ 

৫) হাসপাতালে যাওয়ার সময় খেয়াল করে রোগীর আগের চিকিৎসার ফাইলপত্র নিতে হবে।


প্রয়োজনীয় পরীক্ষাঃ

কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে জরুরী ভিত্তিতে ব্রেইনের রেডিওলজিক টেস্ট, সিটিস্ক্যান, এমআরআই করা উচিত। ঘাড়ের রক্তনালির ডপলার, হার্টের সমস্যার জন্য ইকো পরীক্ষা করা উচিত। রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতাও পরীক্ষা করে নিতে হবে। প্রয়োজনে এনজিওগ্রাম ও ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষাও করতে হবে।


তাৎক্ষনিক চিকিৎসাঃ স্ট্রোক হলে যেহেতু মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে যায় এবং কম রক্তপ্রবাহ নিয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারে না, তাই তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরু করতে হয়। ওষুধ প্রয়োগ করে রক্তের চাপ, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হবে। রক্তের জমাট বাঁধা অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরু করতে হবে। প্রাথমিক ধাপ কাটিয়ে ওঠার পর দীর্ঘদিন ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। তাই স্ট্রোক হয়েছে বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিলম্বে চিকিৎসা নিলে জটিলতা বাড়ে এবং রোগী মারাও যেতে পারে। 


চীনের বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে নিম্নলিখিত পদ্ধতি অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন। 

১। স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে প্রসারিত হয়। তাই প্রথম কাজ হবে ওই ব্যক্তির বিশ্রামের ব্যবস্থা করা।

২। রোগীকে সরানো যাবে না, নড়াচড়া করা যাবে না। কারণ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বিস্ফোরিত হতে পারে।

৩। পিচকারি সুই অথবা সেলাই সুই কয়েক সেকেন্ড আগুনের শিখার উপরে রেখে গরম করে নিয়ে সুচটি জীবানুমুক্ত করতে হবে। তারপর সুচ দিয়ে রোগীর হাতের ১০টি আঙুলের ডগার নরম অংশে ছোট ক্ষত করতে হবে। এমনভাবে করতে হবে যাতে প্রতিটি আঙুল থেকে রক্তপাত হয়। এ কাজটি করার জন্য কোনো অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই। শুধু খেয়াল রাখতে হবে আঙুল থেকে যেন যথেষ্ট পরিমাণে রক্ত বের হয়। 

এরপর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন, দেখবেন রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে।

৪। যদি আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ বিকৃত হয় তাহলে তার কানে ম্যাসেজ করতে হবে। এমনভাবে ম্যাসেজ করতে হবে যাতে রোগীর কান লাল হয়ে যায়। লাল হলে বুঝতে হবে কানে রক্ত পৌঁছেছে।

৫। এরপর দুই কান থেকে দুই ফোঁটা রক্ত পড়ার জন্য কানের নরম অংশে সুচ ফুঁটাতে হবে। কয়েক মিনিট পর দেখবেন মুখ আর বিকৃত হবে না।

এরপর রোগী মোটামুটি স্বাভাবিক হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। স্ট্রোক আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসার এই পদ্ধতিকে বলা হয় রক্তক্ষয় পদ্ধতি। চীনে চিকিৎসার অংশ হিসেবে প্রথাগতভাবে এই পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে আসছে। এই পদ্ধতির ব্যবহারিক প্রয়োগ শতভাগ কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে।


স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়ঃ

* নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করতে হবে

* কেউ উচ্চ রক্তচাপের রোগী হলে চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ খান এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করবেন না।

* ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন

* নিয়ম করে হাঁটা ভালো

* দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন

* মানসিক চাপ পরিহার করে চিন্তামুক্ত থাকুন

* ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

* মনে রাখতে হবে, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে।