তথ্য ও প্রযুক্তির মশাল জ্বলে উঠুক হাতে হাতে

কিভাবে চুল পড়া রোধ করবেন





আপনি কি চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন ।
কিছু নিয়ম অনুসরন করে সহজে চুল পড়া রোধ করতে পারেন ।
আজ এরকম কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করব ।


১)খাবারে লবণ কম খাবেন । লবণ মাথার ত্বকের কোষে পানি জমে থাকত করে । মাথার ত্বকের কোষে পানি জমে থাকল গোড়া নরম হয়ে অধিক চুল পড়তে সাহায্য করে ।


২)ওজন বা মেদ কমানোর জন্য অনেকে হঠাৎ খাওয়া- দাওয়া, একেবারেই ছেড়ে দেয় । এই হঠাৎ খাওয়া কমানোতেও চুল পড়ে। এ ক্ষেত্রে নিউট্রশনিষ্ট কিংবা ডায়েটিশিয়ান পরামর্শ নেয়া যেতে পারে ।


৩)গরীব-মধ্যবিত্তের চুলের সহায়ক খাবার হচ্ছে সবুজ শাক- সবজি । সবুজ শাক- সবজির মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টি উপাদান চুলের জন্য খুব উপকারী । প্রচুর পরিমাণে আয়রণযুক্ত শাক যেমন, লাল শাক, কচুশাক খেতে হবে ।
তবে সামর্থবানরা আঙ্গুরস (গ্রেপ ফ্রুইটককটেল), আলু, সালাদ, কলা, মুরগির মাংস, ডিম খেতে পারেন ।


৪)প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ ফলমূল ও শাকসবজি যেমন- নাশপাতি, বাদাম, গম, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, সবজি, ডিম প্রভৃতি ও জলপাই তেল খাবেন ।


৫)প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান । প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার শুধু যে চুল শক্ত করে তা নয়, চুল গজাতেও সহায়তা করে । প্রেটিনের অভাবে চুলের রঙ প্রথমে নষ্ট হয়ে যায় ।
চুল লালচে বাদামি হতে থ পরে চুল ঝরে যায় এবং চুলের আগা ফাটতে থাকে। কেরাটিনের অভাবে চুল ফেটে যায় । খাদ্য তালিকায় মাছ, গোশত, ডিম, দুধ, ডাল, দই, পনির ইত্যাদি থাকা জরুরি ।


৬)অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার যেমন- আইসক্রিম, পেস্ট্রি কেক, লবণ,ফাস্টফুড, জাংক ফুড,চিনি, পশুর চর্বি,বাটার, ক্রিম, অধিকচর্বিযুক্ত চিজ,হুয়াইট ব্রেড ওময়দা, ভাজা ও চকলেটএবং হোল মিল্ক,
কার্বনেটেড ড্রিঙ্কসইত্যাদি পরিহারকরুন । অতিরিক্ত চা বা কফি পান করবেন না । চা বা কফিতে ক্যাফেইন থাকে যা সকল প্রকার চুল ও স্কিনের সমস্যার জন্য দায়ী ।


৭)ওমেগা- থ্রি (৩)ফ্যাটি অ্যাসিড চুল পড়া রোধে খুব কার্যকর । প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-থ্রি (৩) ফ্যাটি অ্যাসিড তিসির তেলে পাওয়া যায় ।
প্রতিদিন ২ চা চামচ তিসির তেল সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে ।
সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমানে ওমেগা থ্রি পাওয়া যায় ।


৮)নতুন চুল গজাতে প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে অন্তত পাঁচ মিনিট ১০-১৫ মিনিট চুলের ম্যাসাজ করুন। কোকোনাট কিংবা এলমন্ড অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করুন ।
তেল চুল গজাতে বা চুলে পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে, তবে তেল ম্যাসাজ করলে স্ক্যালেন্ড রক্ত সঞ্চালন হয় এবং চুল বাহ্যিকভাবে চকচকে,মসৃণ হয় ।


৯)চুলে অপ্রয়োজনীয় ঘষা-মাঝা, অতিরিক্ত আচরানো পরিহার করুন । অনেকে চুল খুব ঘন ঘন আঁচড়ান। এটা ঠিক নয় । খুব বেশি চুল আঁচড়ানোর ফলে সেবাশিয়াস গ্রন্থি সক্রিয় হয়ে উঠলে চুল পড়ে ।
আবার চুল না আঁচড়ানোও ঠিক নয়। নিন্মমানের চিরুনি বা ব্রাশ ব্যবহার এবং সঠিকভাবে চুল না আঁচড়ানোর জন্যও চুল পড়ে ।


১০)গরম পানি,ড্রায়ার বা এমন কিছুব্যবহার করবেননা যা চুলে অতিরিক্তচাপ তৈরি করে। জেল,মুজ, হেয়ার ডাই এসবচুলের ক্ষতি করে ।
দীর্ঘ সময় হেলমেট,টুপি ইত্যাদি পড়ে থাক না। মাথায় স্কার্ফ ব্যবহার প্রয়োজন না হলে করবেন না ।

১১)চুলের সঠিক যত্ন সম্পর্কে না জানার কারণেও অনেকের চুল পড়ে। প্রচলিত একটি ধারণা আছে, রাতে শোয়ার করে বেণী বেঁধে ঘুমাল তাড়াতাড়ি লম্বা হয় । এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা ।
এতে চুল ঝরে পড়ে দ্রুত। ভেজা চুল কখনো আঁচড়াবেন না । তোয়ালে দিয়েও খুব ঘষে চুল মুছলে চুলের ক্ষতি হয়। ভিজা চুলকখনো বাঁধবেন না ।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বজ্রাসনে বসে চুল আঁচড়াবেন । এতে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং আপনি মানসি চাপমুক্ত হয়ে ঘুমাতেও পারবেন ।

১২)প্রতিদিন ৫-১৫ গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন ।

১৩) যারা প্রতিদিন ঘরের বাইরে বের হন তাদের এক-দুই দিন অন্তর চুল শ্যাম্পু করা প্রয়োজন। চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু ব্যাবহার করবেন।
বিজ্ঞাপনের চটকে ভুলে ভুল শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না ।

১৪)হিন্দি শব্দ চ্যাম্পু থেকে শ্যাম্পু এসেছে । এর অর্থ মালিশ বা ম্যাসাজ । এর মানে বোঝা যায় শ্যাম্পু করার সময় আপনার মাথা ম্যাসাজ বা ঘষতে হবে ।
খুশকির জন্য এ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন । তবে দীর্ঘদিন এ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয় ।

১৫)খুশকি দূরীকরণে চুল ধুয়ে তাতে কিটোকোনাজ ২% শ্যাম্পু বা ড্যানসেল শ্যম্পু হাতে ঢেলে নিন এবং দু’হাতে ঘষে নিয়ে পুরো মাথায় লাগান ।
ভালভাবে লাগিয়ে ৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে । আঙুলের ডগা দিয়ে ম্যাসাজ করে শ্যাম্পু লাগান । এরপর চুল ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে এভাবে সপ্তাহে ২ বার করে ২-৪ সপ্তাহ ব্যবহারে খুশকি কমে যাবে ।

১৬)চুল পড়া রোধের জন্য বাজারে মিনোক্সিডিল নামের ওষুধ পাওয়া যায় । এটি যেখান থেকে চুল পড়ছে সেখানে লাগাতে এটি নারী ও পুরুষ উভয়েই ব্যবহার করতে পারেন ।
এতে কাজ না হলে অন্য চিকিৎসা নিতে হবে। অন্য চিকিৎসার মধ্যে আছে লেজার থেরাপি এলএইচটি, হেয়ার ফলিকল রিপ্লেসমেন্ট, হেয়ার স্কাল্প রিপ্লেসমেন্ট ইত্যাদি ।

১৭)এছাড়া অতিরিক্ত ডায়েট কন্ট্রোল চুল পড়ার কারণ হতে পারে । পর্যাপ্ত ঘুমান এবং বিশ্রাম নিন, কেননা ঘুম ও বিশ্রাম নতুন চুল গজানো ও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়তা করে ।

১৮)ধুমপান ত্যাগ করুন। ধুমপানের কারণে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় যার ফল স্বরুপ চুল পড়ে ।

১৯)প্রতিদিন একটু করে ব্যায়ম করলে শরীর ফিট থাকার পাশাপাশি রক্ত সরবরাহ ঠিক থাকে ।
যার ফলে চুলও পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয় না ।

২০)কিছু ব্যক্তিগত কারণ যেমন হরমোনের তারতম্য, খারাপ স্বাস্থ্য, বিশ্রামের অভাব ইত্যাদির প্রভাবও চুলের ওপর পড়তে পারে। টেনশন, মানসিক যন্ত্রণা ঘুম না হওয়া ।
সুষম আহার, চুলের সঠিক পরিচর্যা এবং প্রয়োজন ওষুধের ব্যবহারে চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে