মাছ ও ডিম ভাজা, ভর্তা বা ঝালমুড়ির জন্য সরিষার তেল ছাড়া অন্য তেল চিন্তাই করতে পারেন না অনেকে। কেবল স্বাদের জন্যই নয়, বহুকাল ধরেই এই তেল ব্যবহারের পেছনে আরো অনেক কারণ রয়েছে।
বলা হয়, সরিষার তেল হলো এ অঞ্চলের অলিভ অয়েল। কেবল খাবার রান্নাতেই নয়, ত্বকের যত্ন থেকে শুরু করে চুলেও সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়। ভারতের সেলিব্রিটি পুষ্টিবিজ্ঞানী সন্ধ্যা গুগনানি বলেন, সরিষার তেল নিয়ে রীতিমতো মিথলজি প্রচলিত রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমেরিকা, কানাডা এবং ইউরোপে এই তেলটি খেতে নিরুৎসাহিত করা হয়। অথচ এই তেলটি অন্যান্য স্বাস্থ্যকর তেলের মতই তালিকার শীর্ষস্থানীয়দের একটি।
এখানে বিশেষজ্ঞদের মতে সরিষার তেলের কিছু বিসম্ময়কর গুণের কথা তুলে ধরা হলো।
১. এই তেলের স্বাদ অনন্য। সরিষা থেকে তৈরি করা হয়। সরিষা সেই শস্যের প্রজাতির অংশ যা থেকে ক্যানোলা তেল তৈরি করা হয়।
২. বাংলা, বিহার, ওড়িশা, আসাম এবং নেপালে সরিষার তেলে রান্না ঐতিহ্যের অংশ। কিছু কাশ্মীরি খাবারও তৈরি করা হয় সরিষার তেলে।
৩. ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরিষার তেল দারুণ কাজের। বলা হয়, এতে আছে ছত্রাক প্রতিরোধী উপাদান। তেলটিকে এই গুণ দিয়েছে অ্যাললি আইসোথিয়ো সায়ানেট।
৪. এক টেবিল চামচ সরিষার তেলে রয়েছে ১২৬ ক্যালরি।
৫. এই তেলে ঝাঁঝালো গন্ধ রয়েছে যার কারণে কীট-পতঙ্গ দূরে থাকে। তাই অনেক সময় পিঁপড়া এবং মশা তাড়াতে সরিষার তেল মিশ্রিত তরল স্প্রে করা হয়।
৬. এই তেলে আছে দুটো গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি এসিড। যথা- ওয়েলিক এসিড এবং লিনোলিক এসিড। এগুলো চুলের জন্য দারুণ টনিকের মত কাজ করে। মাথায় মেসেজ করা হলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। চুলের বৃদ্ধিও গতি পায়।
৭. একে উষ্ণ তেল হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তাই শীতের মৌসুমে বেশ কাজে লাগে।
৮. আয়ুর্বেদে সর্দি ও কাশি দূর করতে সরিষার তেলের ব্যবহার রয়েছে।
৯. দেহের বিষাক্ত উপাদান ঝেড়ে ফেলতে সরিষার তেলের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। খাওয়া হলে বা ত্বকে লাগানো হলে ঘাম বের হয়। এর মাধ্যমেই দেহের বাজে উপাদান বের হয়ে যায়।
১০. রিউমাটিজম এবং আরথ্রাইটিসের চিকিৎসায় ওষুধের সঙ্গে সরিষার তেলের ব্যবহার রয়েছে।
১১. দাঁতের যত্নে সরিষার তেলের সঙ্গে লবণ মিশিয়ে দাঁত মাজতে বলেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
১২. বিভিন্ন তেলের উপাদান নিয়ে গবেষণা চালায় অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (অলএমএস) এবং স্যার গঙ্গারনাম হসপিটাল। তাতে বলা হয়, সরিষার তেল কার্ডিওভাসকুলার ডিজিসের ঝুঁকি কমায় ৭০ শতাংশ। এটা অলিভ অয়েলের চেয়ে ভালো। কারণ অলিভ অয়েলে ওমেগা ৬ (এস৬) এবং ওমেগা ৩ (এন৩) ফ্যাটি এসিডের সুষম ভারসাম্য নেই।
১৩. বাড়িতে তৈরি ফেসপ্যাকে সরিষার তেল ব্যবহার করলে তা আরো কার্যকর হয়ে ওঠে।
১৪. তিসির পাউডারের সঙ্গে সরিষার তেলের ব্যবহারের খুশকি দূর হয়।
১৫. অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান থাকার কারণে সরিষার তেল আচার তৈরিতে অনন্য।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া