তথ্য ও প্রযুক্তির মশাল জ্বলে উঠুক হাতে হাতে

বীর্য কি এবং এতে শুক্রাণুর পরিমাণ কত?







বীর্য কি? হ্যাঁ খুব সাধারণ একটি প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আজকে হাজির হলাম আপনাদের সামনে। রাস্তা ঘাটে, হাটে বাজারে, বাস স্টান্ডে, স্টেশনে সব জায়গায় পোস্টার দেখি বীর্য সমন্ধে। কিন্তু আসলে এই বীর্য কি? কয়জন জানে এ সমন্ধে সঠিক তথ্য? তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে বীর্য কি, এর পরিমাণ এবং এতে কি থাকে?

বীর্য হল অসচ্ছ, সাদা রঙের শারীরিক তরল পদার্থ যা নারী পুরুষ মিলনের সময় পুংলিঙ্গের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মুত্রনালীর মাধ্যমে শরীর থেকে বাহিরে নির্গত হয়। বীর্যের বেশির ভাগ অংশই যৌন অনুভুতির সময় পুরুষ প্রজননতন্ত্রের ক্ষরন/নিঃসরন হতে সৃষ্ট।


বীর্য উৎপাদনঃ
মোট বীর্যের ৬৫% বীর্য তরল ধাতুগত গুটিকা (seminal vesicles) দ্বারা উৎপাদিত।
এছাড়া প্রায় ৩০% থেকে ৩৫% মূত্রথলীর গ্রীবা সংলগ্ন গ্রন্থিবিশেষ থেকে সরবরাহকৃত।
এবং ৫% বীর্য শুক্রাশয় এবং অন্ডকোষের epididymes নামক অংশ হতে উৎপন্ন।


বীর্যের পরিমানঃ
স্বাভাবিক বীর্যস্থলনে প্রতিবার বীর্যের পরিমান বয়সভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আর এই পরিমাণ যুবকদের সবচেয়ে বেশি হয় এবং একেবারে বৃদ্ধ লোকের সবচেয়ে কম হয়। নিম্নে বয়সভেদে বীর্যের পরিমাণ দেওয়া হল।

• ২০-৩০ বছর বয়সী পুরুষের বীর্যস্থলনে বীর্যের পরিমান প্রায় ৪ মিঃলিঃ।

• ৩০-৫০ বছর বয়সী পুরুষের বীর্যস্থলনে বীর্যের পরিমান প্রায় ৩.৫ মিঃলিঃ।

• ৫০-৭০ বছর বয়সী পুরুষের বীর্যস্থলনে বীর্যের পরিমান প্রায় ২ মিঃলিঃ।

• ৭০ উর্দ্ধ পুরুষের বীর্যস্থলনে বীর্যের পরিমান ১ মিঃলিঃ এর মত।

• উপরে প্রদত্ত তথ্যগুলো “হিউম্যান রি- প্রোডাকশান” জার্নাল এর ২০০৩ এর ইস্যু ১৮ এর ৪৪৭-৫৪ নাম্বার পৃষ্ঠায় মুদ্রিত।


বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যাঃ
একজন সুস্থ সবল পুরুষের প্রতি মিলি বীর্যে কমপক্ষে ১৫ মিলিয়ন শুক্রাণু থাকতে হবে। এর কম হলে তাকে বলা হয় অলিগোস্পারমিয়া (Oligospermia)।

শুক্রাণুর নড়াচড়াঃ
সাধারণভাবে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ শুক্রাণুর নড়াচড়ায় সক্ষম এবং গতি থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শুক্রাণুর অতি দ্রুত গতিতে নড়াচড়া প্রয়োজন। শুক্রাণুর এই সংখ্যার কম নড়াচড়া হলে তাকে বলা হয় Asthenozoospermia ।

শুক্রাণুর গঠনঃ
মোট শুক্রাণুর কমপক্ষে ৪০ শতাংশ শুক্রাণু গঠনগত দিক দিয়ে সুস্থ সবল ঠিক থাকতে হবে। শুক্রাণুর গঠনগত ত্রুটিকে Teratozoospermia বলা হয়।
আর বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান সব কিছু ঠিক থাকলে তাকে Normozoospermia বলা হয়।


কি কি কারণে শুক্রাণু ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
আমাদের অ-কোষ বা টেসটিস থেকে শুক্রাণু তৈরি হয়। সেখানে রক্ত চলাচলের সমস্যা বা ইনফেকশন থাকলে শুক্রাণুর উৎপাদন ব্যাহত হয়। তা ছাড়া ধূমপান, মদ্যপান, নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণের কারণে শুক্রাণুর সমস্যার সাথে সাথে পুরুষের শারীরিক অক্ষমতাও হতে পারে। অন্যদিকে খাদ্যে ভেজাল অর্থাৎ ফরমালিন, সিসা, বিষাক্ত রং পুরুষের বন্ধ্যত্ব সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয়। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় অধিক ওজনের কারণে শরীরে হরমোনের তারতম্য হলে বন্ধ্যত্ব সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া অনেকক্ষণ সাইকেল চালানো, টাইট জিন্স বা আঁটসাট পোশাক পরা, কিছু কিছু ওষুধ, এমনকি অনেকক্ষণ মোবাইলে কথা বলার কারণেও পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যাগত ও গুণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।