তথ্য ও প্রযুক্তির মশাল জ্বলে উঠুক হাতে হাতে

নারীদের ঋতুচক্রে নিরাপদ সময় কি এবং কখন




 সবাইকে ইংরেজি নব বর্ষের শুভেচ্ছা। আজকে আপনাদের সামনে বিশেষ এক পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। এই বিষয়টা প্রতিটা বিবাহিত নারী ও পুরুষের জন্য জেনে রাখা জরুরী। আর সেটা হচ্ছে নারীদের নিরাপদ সময়, যে সময় যৌন মিলন করলে নারীদের গর্ভধারনের কোন সম্ভাবনা থাকে না। এতে করে পিল খাওয়া বা কন্ডম ব্যবহার করা, কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। যাই হোক এবার মূল আলোচনায় আসি।

স্বাভাবিক ভাবেই সুস্থ নারীদের প্রতি মাসিক ঋতুচক্রের মাঝামাঝি সময় অর্থাৎ ১৪ দিনের মাথায় লুটিনাইজিং হরমোন (LH) ক্ষরণ হয়। এই হরমোন ক্ষরণের ৩৬ ঘন্টার মধ্যে ডিম্বকোষ (Ovum) বা নারীদের ডিম্বাণু নির্গত হয়। এই ডিম্বকোষ বা ডিম্বাণু যদি ৩৬ ঘন্টার মধ্যে উপযুক্ত সংখ্যক শুক্রানু পায় তাহলে তার একটির সাথে মিলিত হয়ে সন্তান উৎপন্ন করতে পারে। তবে এই ডিম্বকোষটি জীবিত থাকে আরো ৩৬ ঘন্টা অর্থাৎ ডিম্বকোষের সর্বমোট আয়ু হচ্ছে ৭২ ঘন্টা বা তিনদিন। 

অন্যদিকে নারী পুরুষ যৌনমিলনের সময় পুরুষের বীর্য এর সাথে যে শুক্রাণু নির্গত হয় তা জরায়ু তথা ডিম্বনালীতে প্রবেশের পর জীবিত থাকতে পারে সর্বাধিক ৭২ ঘন্টা। তাই নারীদের ২৮ দিনের মাসিক ঋতুচক্রের মাঝামাঝি প্রায় ১২০ ঘন্টা বা ৫দিন হচ্ছে উর্বর সময় বা হিট পিরিয়ড। এই সময় যৌনমিলন হলে সন্তানের জন্ম হতে পারে। এই হিসেবে মোটামুটি মাসিকের ১৪ দিনের মাথায় ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু স্খলিত হচ্ছে ধরে নিয়ে তার ২-৩ দিন আগে থেকে শুরু করে ২-৩ দিন পর পর্যন্ত হচ্ছে হিট পিরিয়ড বা এই উর্বর সময়।

তবে যারা সন্তান নিতে চান না, তাদের এটিও জেনে রাখা দরকার যে, এই ডিম্বকোষের নির্গমনের (ovalution) দিনটি প্রচণ্ড পালটায়। আর অনেক নারীর নিয়মিত ঋতুস্রাব হয়না। তাই এর সাথে আগে ও পরে আরো দু’একদিন যোগ করে নিয়ে হিসেব করা ভাল। এতে করে আরো বেশি নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত থাকা যাবে।

 যাইহোক, মাসিক ঋতুচক্রের ৯ম দিনের আগের ও ২০ তম দিনের পরের সময়কে আমরা মোটামুটি নিরাপদ সময় বলে ধরে নিতে পারি। এই সময়ের মধ্যে যৌনমিলন ঘটলে তার থেকে সন্তান ধারণ তথা গর্ভবতী হওয়ার সম্বাবনা থাকে না, কারণ এই সময় ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বকোষ বা ডিম্বাণু (Ovum) বেরোয়ই না অর্থাৎ ওভুলেশন ঘটে না। কিন্তু অতি বিরল ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, মাসিক ঋতুচক্রের যে কোন দিন (উল্লেখিত নিরাপদ সময়ের দিনগুলিসহ) মাত্র একবারের যৌনমিলনেও নারী গর্ভবতী হতে পারে। অর্থাৎ বিরল ক্ষেত্রে মাসিক চক্রের যে কোন দিন ডিম্বকোষ স্খলিত হতে পারে। তাই এই হিসাবে তথাকথিত নিরাপদ সময় বলে কিছু নেই। তবে এটি সম্পূর্ণই ব্যতিক্রমী ঘটনা।

 তাই সবকিছু বিচার বিবেচনা করে ৯ম দিনের আগে ও ২০তম দিনের পরের সময়টি নিরাপদ সময় এবং ৯ম-২০শ দিনের মধ্যকার সময়টিকে উর্বর সময় হিসাবে ধরা যায়। আর এর মধ্যেও দ্বাদশ থেকে ষোড়শ মতান্তরে ১৩ম থেকে ১৭ম দিনটি হচ্ছে নারীদের হিট পিরিয়ড বা উর্বরতম সময়। 

সূত্র: বিজ্ঞানের আলোয় সংস্কারমুক্ত যৌনতা – ডাঃ ভবানীপ্রসাদ