তথ্য ও প্রযুক্তির মশাল জ্বলে উঠুক হাতে হাতে

গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাফি কেন করাবেন







গর্ভকালীন সময়ে আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যবহার শুধু ইদানিংকালে নয়, অনেক বছর ধরে চলে আসছে৷ গর্ভবতীর জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি একটি অতি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষা গর্ভের যে কোন সময়ে প্রয়োজন হতে পারে৷ এমনকি গবেষণায় দেখা গেছে, আলট্রাসনোগ্রাফি গর্ভকালীন সময়ে বেশ নিরাপদ।

গর্ভাবস্থায় কখন আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে হবে, এ ব্যাপারে রোগীর ডাক্তার বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের মতামতই গুরুত্বপূর্ণ ৷ কাজেই ব্যক্তিগত চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই পরীক্ষা করাতে হবে। সাধারণ ভাবে প্রধানত তিনটি পর্যায়ে একজন গর্ভবতী নারীর আলট্রাসনোগ্রাফি করা উচিত। তবে ব্যক্তিগত চিকিৎসক মনে করলে এর বেশিও করতে পারেন কিংবা কমও করাতে পারেন। যাই হোক, একজন গর্ভবতী নারীর কখন কখন আলট্রসনোগ্রাফি করাতে হবে সে বিষয়ে তুলে ধরা হলো-



প্রথম পর্যায় :
মাসিক বন্ধ হওয়ার আট সপ্তাহের মধ্যে। যদিও মাসিক বন্ধ হওয়ার পাঁচ-ছয় সপ্তাহের মধ্যেই আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে গর্ভধারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়৷ এ পর্যায়ে আলট্রাসনোগ্রাফি করার কারণগুলো হচ্ছে-

* গর্ভধারণ হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া
* গর্ভধারণের নিশ্চিত সময় বের করা
* গর্ভধারণ স্বাভাবিক কি না অর্থাৎ গর্ভধারণ জরায়ুর মধ্যে নাকি জরায়ুর বাইরে তা জানা
* গর্ভস্থ সন্তান একটি, যমজ বা ততোধিক কি না তা জানা
* জরায়ুর ভ্রূণের এক ধরনের টিউমার বা মোলার প্রেগনেন্সি কি না তা নির্ধারণ করা
* গর্ভধারণকালে উপসর্গগুলোর মতো তলপেটের কিছু টিউমার এবং হরমোন নিঃসৃতকারী কিছু ডিম্বাশয়ের টিউমার নিরূপণের জন্য।
* জরায়ুর এক ধরনের টিউমার যা স্বাভাবিক গর্ভধারণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে৷ যেমন - মায়োমা বা ফাইব্রয়েড আছে কি না তা নির্ণয় করা৷

দ্বিতীয় পর্যায় :
গর্ভধারণের ১৮-২২ সপ্তাহের মধ্যে এটি করতে হবে। এর কারন হিসেবে যে যে বিষয়গুলো বিবেচিত হয় -
* গর্ভধারণের সঠিক সময় নির্ধারণ
* গর্ভস্থ সন্তান একটি, যমজ বা ততধিক কিনা তা নির্ধারণ
* গর্ভস্থ সন্তানের কোনও জণ্মগত ত্রুটি বা অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা নির্ণয় করা৷
* গর্ভফুলের সঠিক অবস্থান জানা৷
গর্ভফুল স্বাভাবিক অবস্থানের চেয়ে নিচে অবস্থান করলে যেসব গর্ভবতীকে উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন গর্ভবতী বলা হয় তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বনের জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি জরুরি৷
* মায়োমা বা ফাইব্রয়েড আছে কিনা তা নির্ণয় করা৷

তৃতীয় পর্যায় :
গর্ভধারণের ৩২-৩৬ সপ্তাহের মধ্যে এই পরীক্ষাটি করাতে হবে। এর কারন হিসেবে যা যা জানতে পারা যায় -
* গর্ভস্থ সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কিনা তা নির্ণয়
* গর্ভস্থ সন্তানের কোনও জণ্মগত ত্রুটি বা অস্বাভাবিকতা রয়েছে কি না যা আগের আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষায় ধরা পড়েনি৷
* গর্ভস্থ সন্তানের মাথা ও পা স্বাভাবিক অবস্থানে আছে কিনা তা দেখা৷
* গর্ভফুলের অবস্থান সঠিকভাবে নির্ণয়৷
* গর্ভফুলের মধ্যস্থিত তরল পদার্থের পরিমাণ জানা৷
* সম্ভাব্য জটিলতা, যেমন- মায়োমা বা ফাইব্রয়ের এবং ডিম্বাশয়ের কোন টিউমার ইত্যাদি আছে কিনা তা নিরূপণ৷

এ যুগে সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে তা গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং নিরাপদ মাতৃত্ব তথা সুস্থ সন্তান প্রসবই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে শুধু তা জানার জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি করা ততোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়৷

আলট্রাসনোগ্রাফির জন্য প্রস্তুতি:
এই পরীক্ষা করাতে গেলে আগাম কিছু প্রস্তুতি লাগবে। যেমন - এই পরীক্ষার জন্য গর্ভবতী মায়ের প্রস্রাবের চাপ থাকতে হবে ৷ এ জন্য পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে রোগীকে চার-পাঁচ গ্লাস পানি বা অন্য কোনও পানীয় পান করাতে হবে৷ আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার আগে রোগী যেন প্রস্রাব না করেন সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে৷