তথ্য ও প্রযুক্তির মশাল জ্বলে উঠুক হাতে হাতে

জমির দলিল কত প্রকার জেন নিন বিস্তারিত


দলিল বলতে যে কোন চুক্তির লিখিত ও আইনগ্রাহ্য রূপ বোঝায়। কিন্তু বাংলা ভাষায় সম্পত্তি, বিশেষ করে জমি-জমা ক্রয়-বিক্রয়, বণ্টন এবং হস্তান্তরের জন্য লিখিত যে বিশেষ কাগজ  তাই হচ্ছে  ‘দলিল’ ৷ দলিলের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ থাকে যেমন- 
(ক) সম্পত্তির বর্ণনা,
(খ) দাতার পরিচয়,
(গ) গ্রহিতার পরিচয়,
(ঘ) সাক্ষীদের পরিচয় এবং
(ঙ) দলিল সম্পাদনের তারিখ।



দলিল সম্পাদনের পর সরকারের মনোনীত কর্মকর্তা কর্তৃক নিবন্ধনের বিধান রয়েছে। এতে দলিলের আইনী বৈধতা দৃঢ়তর হয়। দলিল সম্পাদনের জন্য সরকারকে রাজস্ব দিতে হয়।

বাংলাদেশ ভূমি আইন অনুযায়ী জমির দলিল মোট ৯ প্রকার ৷ নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো ৷

(১) সাফ-কবলা দলিল
(২) দানপত্র দলিল
(৩) হেবা দলিল
(৪) হেবা বিল এওয়াজ দলিল
(৫) এওয়াজ দলিল
(৬) বন্টন নামা দলিল
(৭) অছিয়ত নামা দলিল
(৮) উইল দলিল
(৯) নাদাবী দলিল

সাফ কবলা দলিলঃ
কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি অন্যের নিকট বিক্রয় করে যে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারী করে দেন তাকে সাফ কবলা বা বিক্রয় কবলা বা খরিদা কবলা দলিল  বলা হয়।

এই কবলা দলিল নির্ধারিত দলিল ষ্ট্যাম্পে লিখার পর বিক্রেতা সাবরেজিষ্টারী অফিসে উপস্থিত হয়ে দলিলে স্বাক্ষর করে গ্রহিতা অর্থাৎ ক্রেতা বরাবরে রেজিষ্টারী করে দিবেন। এই দলিল রেজিষ্টারী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলিলের তফসিলে লিখিত জমির যাবতীয় স্বত্ব
দলিল দাতা হতে বিলুপ্ত হয়ে দলিল গ্রহিতার উপর অর্পিত হবে।

দানপত্র দলিলঃ
যে কোন সম্প্রদায়ের যে কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি দান করতে পারেন। এই দানপত্র দলিলে শর্তবিহীন অবস্থায় সকল প্রকার ক্ষমতা প্রদানের কথা উল্লেখ থাকে ৷ কারন স্বত্ব সম্পন্ধে দাতার কোন প্রকার দাবী থাকলে দানপত্র শুদ্ধ হবে না।

হেবা দলিলঃ
মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এই হেবা অর্থাৎ দানপত্র দলিল করা হয় ৷ এই দলিল কোনকিছুর বিনিময়ে নয়, কেবলমাত্র সন্তুষ্ট হয়ে এইরূপ দান করা হয়। এই হেবা শর্তবিহীন অবস্থায় দান, বিক্রয়, ও রূপান্তর ইত্যাদি সকল ক্ষমতা প্রদানের নিমিত্তে করা হয়। কারন স্বত্ব সম্বন্ধে দাতার কোনরূপ দাবী থাকলে সেই দান বা হেবা শুদ্ধ হবে না এবং তা যে কোন সময় বাতিলযোগ্য।

হেবা বিল এওয়াজঃ
এই হেবা বিল এওয়াজ মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি দানপত্র দলিল ৷
এই দানও সন্তুষ্ট হয়ে করা হয় বটে। কিন্তু ইহা কোন কিছুর বিনিময়ে হয়ে থাকে, যেমন- পবিত্র কোরআন, জায়নামাজ,
তসবিহ, মোহরানার টাকা, এমন কি যে কোন জিনিষের বিনিময়েও হতে পারে ৷  এই হেবা বিল এওয়াজ দলিল সম্পূর্ণ শর্তবিহীন অবস্থায় গ্রহিতা যাবতীয় কার্যাদি যেমন-  হস্তান্তর ও রূপান্তরের সকল প্রকার ক্ষমতার অধিকারী হবেন
এবং দাতার যাবতীয় স্বত্ব গ্রহিতাতে অর্পিত হবে। এই হেবা বিল এওয়াজ অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে।

এওয়াজ দলিলঃ
যে কোন সম্প্রদায়ের কোন ব্যক্তি যে কোন ব্যক্তির সহিত তাহাদের সুবিধা মত একের ভূমি অপরকে দিতে পারেন অর্থাৎ
পরস্পর পরস্পরের জমি পরিবর্তন করতে পারেন। এধরনের দলিলকে এওয়াজ দলিল বলে ৷এই দলিল ও অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে৷

বন্টনমানা দলিলঃ
শরিকগণের মধ্যে সম্পত্তি ক্রমান্বয়ে নিজ নিজ ছাহাম প্রাপ্ত হয়ে উক্ত ছাহামের বাবদ যে দলিল করতে হয় তাকে বন্টননামা দলিল বলে।

একই সম্পত্তিতে মালিকের বংশের
লোককে সাধারণত শরিক বলা হয়। শরিক দুই প্রকারের, যথা- উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক ও কোন শরিক হতে খরিদ সূত্রে শরিক। বন্টননামা দলিল করবার সময় সকল শরিকগণ উপস্থিত থেকে দলিলে দস্তখত করে বন্টননামা দলিল করতে হয়। কোন একজন শরিক বাদ থাকলে বন্টননামা শুদ্ধ হবেনা। বন্টননামা দলিল ও রেজিষ্টারী করতে হবে ৷

অছিয়তনামা দলিলঃ
কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি কাউকে বা তার  উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সকলকে না দিয়ে যদি একজনকে বা তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে প্রদান করে থাকেন এবং অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর যদি তাহার উত্তরাধিকারীগণ দাবী উত্থাপন করেন তাহলে যাকে সম্পত্তি অছিয়ত করা হলো সেই ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পাবে এবং অবশিষ্ট দুই তৃতীয়াংশের মালিক উত্তরাধিকারী দের মধ্যে সকলেই হবেন।

উইল দলিলঃ
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক তাদের নিজস্ব সম্পত্তি মৃত্যুর আগে আত্মীয়দের মধ্যে যাকে ইচ্ছা উইল করে দিতে পারেন। যিনি উইল করলেন তিনি জীবিত কালে একের অধিক উইল করতে পারেন। কিন্তু সর্বশেষ যে উইল করবেন কেবল সেটাই কার্যকরী হবে।

নাদাবী দলিলঃ
কোন ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট কোন সম্পত্তিতে তার কোন স্বত্ত্বাধিকার নাই কিংবা  স্বত্ত্বাধিকার ত্যাগ করছেন মর্মে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রি করে দিলে  এরূপ দলিলকে
নাদাবী দলিল বলে ।।